“পুরুষ মানুষের ঈদ”
মো: বায়েজিদ বোস্তামী
কুলিয়ারচর, কিশোরগঞ্জ।
পুরুষ মানুষের ঈদ সে তো আজব প্রাণীর খেলা,
সারাবছর গতরখাটুনীতে শেষ হয়না সারাবেলা।
সবার খুশির মান রাখতে কাজে সর্বদা থাকে বিভোর,
নিচু কাজ কি আর উঁচু কাজ হায়েনার মতো খুঁজে কাতর।
ক্লান্তি তাহার মনে হয় না সবার খুশি যখন চোখে ভাসে,
কাজের গতি আরো বাড়ে বাস্তব রূপ দিতে তারে।
সবার খুশি সবার স্বপ্ন দেখে যার যার মতে,
সবার স্বপ্ন জয় করতে পুরুষ দিনরাতই খাটে।
কাজে কর্মে প্রতিদিনই শত অপমান,
মুখ বুজে সহ্য করে মনে হয় বেরিয়ে যায় প্রাণ।
তবু যেন পরিবারে পুরুষ মানুষ বোকা
পদে পদে সবার কাছে পেয়ে যায় ধোঁকা।
পরিবারের সদস্যরা ভাবে পুরুষ সহজ- সরল সোজা,
কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় পরিবারের সব বোঝা।
মাহে রমজানের রোজা রেখে কাটায় সারা মাস,
ঈদে কার কি লাগবে পুরুষ হায়- হুতাশ।
ছেলে বলে এবার ঈদে প্যান্ট শার্ট নয় আর জুতা,
সাথে লাগবে টুপি মোজা পাঞ্জাবি আর পায়জামা।
মেয়ে বলে ফ্রগের সাথে কিনবো এবার লেহেঙ্গা,
জুতা চুড়ি ওড়না দিবে কসমেটিকস শেষে বায়না।
ভাই বলে এবার ঈদে বিশেষ বিশেষ অফার,
আমায় তুমি টাকা দিবে স্টাইলের কী যে বাহার!
বোন বলে ঈদের মার্কেট নয় তো এবার একা,
সাথে আছে ভাগ্নে ভাগ্নি এবার ঠেলা সামলা।
বউ বলে পাশের ভাবি শাড়ি কিনেছে সেই সেরা,
হাতের বালা কিনে দিবে দেখবে এবার তারা।
তোমার শালা বায়না ধরেছে দিতে হবে ব্র্যান্ডের মোবাইল,
মান ইজ্জতের টান লেগেছে কোনমতে দিনরাইত পোহাইল।
শালিকা তোমার কি যে ভক্ত বেশি কিছু লাগবে না তাহার,
তার জ্বালাতে সারাবছর যায় বলা তো যায় না আবার।
শ্বশুর শাশুড়ি মুরুব্বি মানুষ কয়দিনই বা বাঁচে,
ভালো দেখে কিনো এবার মনে যেন থাকে।
মা – বাবা তো বাড়ির প্রধান সন্মানেরই তাজ,
তাদের কিছু না দিলে নিজেই তো হই নারাজ।
দাদা- দাদি নানা – নানী বয়োবৃদ্ধ মানুষ,
সামনের ঈদে পাই কিনা থাকবো কিনা হুঁশ,
এবার ঈদে কিনতে হবে মনে বড় আউশ।
পুরোন কাপড় ধুয়ে দিয়ে বালিশের নিচে রেখে,
ঈদের মাঠে যাবে পুরুষ জায়নামাজ নিয়ে হাতে।
ছোট্ট ছেলে রাজকুমার সেজে ধরবে পিতার আঙুল,
ঈদ গাহে যাবো বলবে ওরে আমার বুলবুল!
চুমু খেয়ে নামাজ পড়ে করবো এবার উসুল।
নামাজ শেষে কোলাকুলি পকেট যদিও ফাঁকা,
ছোটদের এবার দিতে হবে সেলামী দাও ঝাঁকা।
ছোট্ট মামনী রাজকন্যা ভীষণ অভিমান,
ঘুরতে আমায় নিতে হবে লও ঠেলা এবার বাজান।
ঈদের নামাজ শেষে যখন কবর পানে যাই,
মৃত বাবা মা আমার দোয়া বারে বারে চায়।
রমজান আমায় দেয় রে ছুটি শুরু কবরে আজাব,
আমার সন্তান করবে দোয়া শেষ হবে গোর আজাব।
সূরা ফাতিহা পড়ে আমি ধরি মোনাজাত,
চোখের পানি ফেলে চাই আমার বাবা-মায়ের নাজাত।
সংসার আমার পান্তা পুরায় দুঃখের নাইরে শেষ,
বুক চাপা কষ্ট আমার নিরালায় কেঁদে নি:শেষ।
পুরুষ মানে পুরুষ সে তো নয় একটা মানুষ,
সবার আবদার রাখার যন্ত্র বুঝেনা রঙিন ফানুস।
দিন দিন শরীর দূর্বল লেগে আছে রোগ- শোক,
তবু যেন পুরুষ নামের নেই কোন অভিযোগ।।